Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা। "Mowdud's World"


 

একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।


         প্রেমটা রয়ে গেলো আগের মতোই------- 



একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

=
জীবনে একবার কঠিন প্রেমে পড়েছিলাম, সেই তের বছর বয়সে! এই একটা প্রেম ভুলে থাকার জন্য জীবনে আরো কত প্রেম করলাম, কিন্তু সেই প্রেমটাকেই ভুলতে পারলাম না!

 

তার ছিল কঠিন দুটো মায়ায় ভরা চোখ, সে চোখ ছিল জলে ভরা। আর ঠোঁটে থাকত মায়াবী হাসি!
আমি যতবারই প্রেমে পড়েছি, শুধু সেই চোখ আর সেই হাসিটাই খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি!

 

জীবনে এমন এক কঠিন প্রেমে পড়লাম যে, কোনদিন সে প্রেমের কথা তাকেও বলতে পারিনি!
প্রথমে যখন বলতে চাইতাম, তখন বুকটা ভয়ে দুরুদুরু করত আর কান্না পেত!

 

ভাবলাম একটু সময় নিয়ে সহজ হই পরে তাকে বলব, কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে বাবা বিয়েই দিয়ে দিল! পরে ভাবলাম, বিয়ে হয়েছে তাতে কি!
তবুও বলব! কিন্তু ততদিনে তারও বিয়ে হয়ে গেল!
তার ছেলেপুলে হল, আমারও হল!
কিন্তু প্রেমটা এখনও সেই আগের মতই রয়ে গেল!
তার সাথে কথা বলতে গেলে এখনও কথা ফুরিয়ে যায়, বুকটা ঢিপঢিপ করে কাঁপে!

 

জীবন অর্ধেক চলে গেল, ছেলেপুলে বড় হয়ে গেল। কিন্তু সেই প্রেমটা আগের মতই রয়ে গেল!
এখনও তো কলংকের বাকী আছে অনেক দিন।

তাই ভেবে রেখেছি, যখন তার বয়স হবে আশি, আর আমার সত্তর! তখনই রানী এলিজাবেথের মত এক অভিনব কায়দায় তাকে প্রপোজ করব আমি!
সঙ্গে থাকবে আমার এক ডজন নাতী নাতনী!





           কোন জীবন আসলে সুখের---- 

=
একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।
আমার দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন আমেনা বিয়ের আগে এক ছেলের প্রেমে পড়েছিলো, কিন্তু সেই ছেলে গরীব হওয়ায় আমেনার বাবা মা আমেনাকে অন্যে একটা জায়গায় বিয়ে দিয়েছিলো বিরাট বড়োলোক দেখে। আমেনার সেখানে একটা সন্তান হয়। সন্তানের যখন চৌদ্দ বছর বয়স হয় তখন আমেনার সেই বড়োলোক বরটা কি এক অসুখে যেন ঘাড় পিঠ তার অসাড় হয়ে যায়, কোনোদিকে ফেরাতে পারে না।

 

আস্তে আস্তে সেটা বেড়ে তার হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। সে হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করে।
আমেনা ওর স্বামীর ওই অবস্থা দেখে সে তার আগের প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। কিন্তু এটা আমেনাদের পরিবার মেনে নিতে পারে না। রাগে ঘৃণায় সব ফেটে পড়ে। আজ পর্যন্তও ওকে ওর মা বাবা ক্ষমা করেনি। আমেনার ছেলে পণ করেছে সে কোনোদিনও আর মায়ের মুখ দেখবে না, সে তার বাবার কাছেই থাকে। আমেনা অনেক চেষ্টা করেছে ছেলের সাথে কথা বলার, কিন্তু আজ পর্যন্তও পারেনি!

 

শাকিলা আমেনার ফুফাতো বোন, শাকিলা দু'বছর প্রেম করে পারিবারিক সম্মতিতে ওর পছন্দের ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু ওর বাচ্চা হতে দেরি হওয়ায় ওর স্বামী আবার আরেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আর এটা জানাজানি হতে হতে ততদিনে শাকিলা মা হয়ে যায়। তাই ও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ওর স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে।

 

শাকিলার শ্বশুর বাড়ির মানুষ শাকিলার পক্ষে থাকায় ও ওর স্বামীর বিয়েটা আটকাতে পারে, কিন্তু ওর স্বামীর সেই যে অন্যে নারীতে আসক্ত হয়ে যাওয়ায় ওদের সেই ভালোবাসাটা আর ফিরে আসে না। শাকিলাকে যত রকম মানসিক শাস্তি পারে ওর স্বামী দিচ্ছে, কিন্তু ও কোনো প্রতিবাদ করে না। ওর ধারণা ওর স্বামী একদিন আবার আগের মতো হয়ে যাবে!

 

আচ্ছা, এইযে দু'টো জীবন দুই রকমের, এই দু'টো জীবনের মধ্যে আসলে কে সঠিক?
একজন নিজের সুখ কুড়োতে গিয়ে সমস্ত হারালো, আর একজন সমস্ত কুড়োতে গিয়ে নিজের সুখটা বিসর্জন দিচ্ছে!

 

একজন এমন ভালোবাসাহীন অতৃপ্ত মিলেনে একদিন তাদের পৃথিবীটা বিষের মতো মনে হবে।
আর একদিকে তন্ময়ের মতো ছেলেরা সারাজীবন মা নামক নারীকে ঘৃণা করে যাবে!




 

         আজেবাজে অকাজে হেলেঞ্চা শাকের কাছে---

 

=
ছোটবেলায় যখন পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে চড়ায় গিয়ে হেঁলেঞ্চা কলমি শাক কুড়োতাম, তখন খালি মনে মনে ভাবতাম, আচ্ছা এইযে এত এত ঘাস তার মধ্যে থেকে বেছে বেছে আমরা শুধু দু'এক রকমের ঘাস খাই কেন?

একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

 

আমার মনে হতো ক্ষেতে যত ধরণের ঘাস আছে সবই সেদ্ধ করে রান্না করলে খাওয়া যাবে। কিন্তু এসব তো মা'কে বলা যাবে না তাই ঠিক করে রেখেছিলাম বড়ো হয়ে সব লতাপাতা আমি রেঁধে রেঁধে খাবো!

 

একবার ঢাকায় এসে দেখি, এখানকার মানুষ তেলাকুচের পাতা রেঁধে খায়। আমাদের গ্রামের ঝোপঝারে বাড়ির আশপাশের দেয়ালে ওসব কত ঝুলে থাকে, গ্রামের মানুষ ওসব খায় না। শুধু ওতে ফল হলে বুলবুলি পাখিরা খায়।

 

বাড়ি গিয়ে সবাইকে বললাম, এই ঢাকার মানুষেরা না তেলাকুচের পাতা রেঁধে খায়!
কিন্তু আমার কথায় কেউ একটা তেমন আশ্চর্য্য হলো না, কেউ কেউ বলল, হ্যাঁ খাওয়া যায় তো ও শাক রান্না করলে খুব মজা!

 

আমি বললাম দাঁড়াও আজই রাঁধব আমি!
পেছন বাড়িতে গিয়ে যত তেলাকুচের গাছ ছিলো সব টেনে হিচড়ে নামিয়ে তা থেকে পাতা ছিড়ে এনে শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করলাম। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখি এক ধরণের গাছ গাছ গন্ধ, মুখেই দেওয়া যায় না!
যারা বলেছিলো তেলাকুচের পাতা খুব স্বাদ তাদের ডেকে এনে খেতে দিলাম। তারা তরকারি মুখে দিয়ে বলে, এই তুই কিসের শাক রেঁধেছিস রে, আয় তো একটু দেখা?

 

তাদের নিয়ে গাছ দেখালে বলে, হায় হায় এসব তো তেলাকুচা গাছ না, এগুলো তো ব্যারাটি গাছ!
তুই এখনও তেলাকুচা গাছও চিনিস না?
আমি বলি আমি চিনব কি করে? দু গাছই তো একই রকম দেখা যায়!

 

কালকে বাজার থেকে সরষে শাক কিনে এনেছিলাম। বাছতে গিয়ে দেখি, অর্ধেক শাক আর অর্ধেক লম্বা লম্বা ঘাস। মনে মনে ভাবলাম এটাই সুযোগ, আজকে এইসব ঘাসগুলো সহ শাক ভেজে দেখব খেতে কেমন!

 

কিন্তু ভেজে দেখি সব ঘাস গুলো কেমন নরম না হয়ে লম্বা লম্বা আলাদা হয়ে আছে!
ডরে ডরে সায়েবকে খেতে দিলাম, খেতে গিয়ে সে বলতেছে, এই মহিলার আক্কেল জ্ঞান কি কোনোদিনই হবে না!
ঘাসসুদ্ধ শাক ভেজে রেখেছে!



 








একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

           গল্পটা আমার মনে প্রভাব ফেলেছিলো---- 

=
ছোটবেলায় আমার খুব পছন্দের একটা কাজ ছিলো সবাইকে গল্প পড়িয়ে শোনানো। মায়ের থেকে স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনবর্ণ শেখার পর থেকেই সেই যে বানান করে করে আধাভাঙ্গা উচ্চারণ করা শিখেছিলাম, তখন থেকেই নেশাটার শুরু।

 

বাড়িতে কেউ এলেই বসে যেতাম তার সামনে বই নিয়ে। আমি ছোট গল্প নয়ত কবিতা পড়তাম নাহয় পাঠ্য বইয়ে যেসব গল্প থাকত সেসবই পড়তাম। তবে সবচে বেশি পড়েছি আমি "দ্বাহিয়া ক্বালবীর" সেই বিখ্যাত ঘটনাটি, যে নিজের মেয়েকে জ্যান্ত পুতে দিয়েছিলো শুধু মেয়ে হওয়ার অপরাধে। সেই জাহেলী যুগের গল্প। কিন্তু আমি কখনও গল্পটি পড়ে শেষ করতে পারতাম না। অর্ধেকের বেশি পড়া হয়ে গেলেই আমার গলাটা ধরে আসত, আমার কান্না পেত তাই অর্ধেক পড়েই সব সময় রেখে দিতাম।

 

এই গল্পটা আমার মনে খুব প্রভাব ফেলেছিলো, আমি সব সময় নিজেকে সেই মেয়েটির মতো ভাবতাম।
আমি কল্পনা করতাম, বাবা মাটি খুড়ছে আর সেই মাটি ছিটে ছিটে বাবার কাঁধে মাথায় এসে পড়ছে, আমি সেইসব মাটি ঝেড়ে দিচ্ছি আর বার বার বাবাকে জিজ্ঞেস করছি, বাবা! এই গর্ত দিয়ে কি করবে?

 

একটু বড়ো হয়ে ধারণাটা পাল্টে যায়। দেখি, আমার বাবা সব সময় ভাইয়ের চেয়ে আমাকেই বেশি ভালোবাসে। আমি বুঝতে শিখি আসলে ওসব গল্প ছিলো, অন্ধকার যুগের গল্প। এখন আর সেই দিন নেই। এখনকার বাবা'রা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি ভালোবাসে।

 

কিন্তু এর মাঝেও কিছু কিছু বাবাদের দেখলে আমার মন খারাপ হয়ে যেত,
এই যেমন নাসিমার বাবা, নাসিমারা চার বোন হয়েছে বলে উনি আর কোনো কাজ করতেন না, কথায় কথায় মেয়েদের মরে যেতে বলতেন। নাসিমার মায়ের সাথে সারাদিন ঝগড়া করতেন।
এমন এমন আরও অনেক বাবাকে দেখতাম।

 

একবার এক বাবাকে দেখেছিলাম, স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে তিনি সারা সময় মাথায় টোপর পরে বসেছিলেন, তাদের যদি আবার মেয়ে হয় তাহলে তিনি ওই অবস্থায়ই আবার বিয়ে করতে যাবেন। কারণ তাদের আগে আরও তিনটে মেয়ে ছিলো।

 

এসব দেখে দেখে আমার সাময়িক মন খারাপ হলেও সেই দ্বাহিয়া ক্বালবীর ঘটনাটির মতো মনে এতটা নাড়া দিতো না, নাসিমা ফাতেমা ওদের জন্যে মায়া লাগলেও কখনও এসব আমার মনে দাগ কাটত না।

 

কিন্ত এই কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার এক বাবার নিষ্ঠুরতার কাহিনী সেই জাহেলী যুগের দ্বাহিয়া ক্বালবীর ঘটনাকেও হার মানিয়েছে!
তার মাত্র দু'টো মেয়ে, ছোট মেয়েটার মাত্র নয়মাস বয়স। সে খলখল করে হাসতে শিখেছে। বাবাকে দেখলেই ঝাপিয়ে কোলে যেতে শিখেছে। আধো আধো বুলিতে ডাকতেও শিখেছে। সেই মেয়ের বুকে পা রেখে বাবা তার মেয়েকে মেরে ফেলেছে!

 

মেয়েটার প্রাণটা যতক্ষণ না বেরুচ্ছিলো ততক্ষণ সে কেমন ছটফট করেছিলো ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে!
চারদিকের শিশুধর্ষণ খুন দেখে কেবলি মনকে আমি জিজ্ঞেস করি, আমরা কি সেই অন্ধকার যুগটা খুব বেশি পেরিয়ে এসেছি?




 








          একমাত্র স্বামী ছাড়া, অন্য সবার কাছেই নারী হলো বোঝা ।

=
যেখানে আমাকে পালকি থেকে নামানো হলো সেখানে একটা খুঁটির সাথে হ্যাজাক বাঁধা ছিলো। অনেক মহিলারা দেখতে এসেছিলো, তার মধ্যে থেকে অস্ফুটে কে যেন বলে উঠল, ওমা জোঁকের সাথে এমন মানিক বেঁধে দিলো কে!একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

 

পরদিন প্রতিবেশিরা কেউ কেউ আমাকে একা পেলেই জিজ্ঞেস করেছে কি দেখে তোমার বাবা এমন বিয়ে দিলো!
বাড়ি গিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলেই সবার মুখে একই কথা শুনতে হয়েছে।

 

বিয়ের একসপ্তাহ পর বড়োচাচা দেখতে এলো, তাকে সালাম করতে গেলে সে সরে গেল। বড়োভাই বিয়ের সময় ঢাকায় ছিলো, বাড়ি এসে সব শুনে আমাকে বলল, তুই আমার সামনে আর কখনও আসবি না।
মায়েরও তার মেয়েজামাই দেখে পছন্দ না। আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলেও সবাই যেন আড়ালে ফিসফিস করত আর মুখ লুকিয়ে হাসত।

 

এতসব দেখে দেখে আমার কেবলি মনে হতে লাগল, এই লোকটি মনে হয় আমার যোগ্য নয়। আমার মনে হয় এরচেয়ে ভালোকিছু পাওয়ার কথা ছিলো।
আমি হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলাম। আমার অহংকার বাড়তে লাগলো, আমি সারাক্ষণ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে লাগলাম, কথায় কথায় তাকে অপমান করতাম।
কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইলে তার সাথে যেতাম না, আমিও কোথাও গেলে একা যেতাম। এভাবে চলতে আমার মন বিষিয়ে উঠল, আমি দিনরাত ঝগড়া করতাম আর কাঁদতাম।

 

ঝগড়া করতে করতে একেক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেতাম যে, তখন আমাদের মারামারি পর্যন্ত লেগে যেত।
এইভাবে কেটে গেল দশ বছর। ততদিনে আমি দুই সন্তানের মা।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আমি আর ওর ঘর করব না আমি ডিভোর্স নেব।

 

আমাদের এই ঝগড়ায় বাড়ির মানুষেও অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলো, নানাজনে নানারকম মন্তব্য করত।
বেশিরভাগে বলত আমার অন্যে কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে তাই স্বামীর সাথে এমন বাজে ব্যবহার করি।

 

ঝগড়া করে করে রাগ করে বাড়ি গেলে সবাই বলত, তুই চলে আয় একেবারে, তোর আর এত কষ্ট করে ওখানে থাকতে হবে না।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম, কিন্তু কিছুদিন থাকার পরেই দেখি, সবাই কেমন যেন আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।

 

আমি ঢাকায় চলে এলাম ভাইয়ের কাছে, যে আমাকে সবচে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু সেখানেও দেখি একই অবস্থা।
আমি মন ভালো করার জন্যে চাচা মামাদের কাছে বেড়াতে গেলাম, কিন্তু কেউ দেখি আর আগের মতো নেই, সবাই কথা বলে কেমন ছাড়া ছাড়া, আগের মতো আর কেউ ভালোবাসে না। এভাবে মাসছয়েক চলার পরে আমি অসহ্য হয়ে উঠলাম, অনেকেই কথায় কথায় শ্বশুর বাড়ির কথা তুলে খোটা দিতে শুরু করল, আমার একবার মনে হতো মরে যাই, পরক্ষণেই মনে হতো এই সন্তানদের আমি কার কাছে রেখে যাবো!

 

একদিন হুট করে মাথায় এলো আমি আমার সংসারে ফিরে যাবো, খবর দিলাম, সেদিনই সন্ধ্যায় সে এসে আমাকে নিয়ে গেল।
কিন্তু একটা জিনিস দেখে আশ্চর্য্য হলাম, এইযে এতদিন পর এলাম, সে একটিবারও জিজ্ঞেস করল না আমি এতদিন কেন এলাম না!
বরং তাদের বাড়ির কে যেন এটা নিয়ে বলতে এসেছিলো এক চিৎকারে তার মুখ বন্ধ করে দিলো!

 

এতদিনে আমার একটা উপলব্ধিই হলো নারী একমাত্র স্বামী ছাড়া সবার কাছেই বোঝা!
সে পাগল অসুস্থ বোবা কালা যেমনই হোক, দিনশেষে তার কাছেই নিরাপদ আশ্রয়!





         প্রেম করেছিলাম শোধ নেওয়ার জন্য---- 



একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

=
বাবা যে ছেলেকে পছন্দ করে আমায় বিয়ে দিয়েছে সেই মানুষটা আমার পছন্দ না। তার কোনোকিছুই আমার পছন্দ না। তার কথাবার্তা, তার আচার-আচরণ তার চলাফেরা সবকিছুই আমার বিরক্ত লাগে। আমি সব সময় চাইতাম তার সাথে যে করেই হোক যেন আমার বিচ্ছেদ হয়। সংসারটা টিকিয়ে রাখার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না।

 

তাই যত রকমের বাজে আচরণ আমি তার সাথে করতাম। যখন যেখানে ইচ্ছে হুটহাট চলে যেতাম কখনও বলে যেতাম না। কোথাও গেলে সে তাড়াতাড়ি আসতে বললে সেখানে আমি জিদ করে দেরি করে ফিরতাম। সংসার করার চেয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে আমার বেশি ভালো লাগত, তাই যখন তখন ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যেতাম।

 

আজ নদীর ধারে তো কাল নদীর ওপারে। নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। মুক্ত হাওয়া আর স্বচ্ছ নদীর জল দেখে দেখে আমার বুকের ভেতর খানিকটা যে আগুন ছিলো তা নিভে নিভে যেত।

 

আমি প্রেম করেছিলাম শোধ নেয়ার জন্যে, ভেবেছিলাম আমি জীবনটাকে ফের নিজের মতো গোছাবো। জীবনের শেষ সময়টুকু হলেও আমি নিজের চেষ্টায় সুখী হবো।

 

পছন্দের মানুষ খুঁজে পেতে পেতে অনেকটা সময় কেটে গেল। তারপর একজনকে পছন্দ হলো। যাকে আমার পছন্দ হলো সে বাহ্যিক রূপটাকে প্রাধান্য দিতো বেশি। আমি দেখতে কেমন। আমার চুল ঘনকালো কিনা, আমার বোরখাটা কত দামি, আমার পার্সটা কেমন,, আমার চোখদুটো কেমন, আমি নিয়মিত ফর্সা হচ্ছি কি না চেহারা মলিন হচ্ছে আগের মতো।

 

আমার স্বামী এসবে কোনোদিন গুরুত্ব দেয়নি। আমি কেমন জামা পড়েছি দেখতে কেমন হচ্ছি শুকিয়ে যাচ্ছি কি কালো হয়ে যাচ্ছি, সে ব্যস্ত মানুষ এসব দেখার তার সময় ছিলো না, তাই আমারও কখনও এসব নিয়ে ভাবতে হতো না।

 

কিন্তু যখন প্রেমে পড়লাম তখন এসব নিয়ে ভাবনা এলো, আমি নতুন করে ত্বকচর্চা করতে শুরু করে দিলাম। চুপে চুপে মুখে এটা মাখি ওটা মাখি, যেন পুর্বের চেয়ে আরেকটু ফর্সা হই। যতবার তার সাথে দেখা করতে যেতাম আমার বোরখা জামা এসব নিয়ে ভাবতে হতো, আমি নতুন করে বোরখা জামা জুতো সব কিনতাম।

 

তাকে কি কিনে দিলে সে খুশি হবে, কেমন হোটেলে খাওয়ালে সে খুশি হবে সেসব নিয়ে ভাবতাম। অথচ আমার স্বামীকে নিয়ে কখনও এসব ভাবতে হতো না। সে কোনোকিছু আমার থেকে না পেয়েও খুশি ছিলো, বরং সে চেষ্টা করত কি পেলে আমি খুশি হবো।

 

একদিন হঠাৎ করে খুব ছোট্ট ছোট্ট অভিযোগ করে আমার প্রেমিক আমার সাথে বিচ্ছেদ ঘটালো। আমি কেন সুন্দর করে কথা বলতে পারি না, কেন আমি স্মার্ট নই কেন আমি বোরখা পরি এসব।

 

আমি বিয়ে আর প্রেমের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে লাগলাম, যেখানে আমি বিয়ের সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্যে এতদিন ধরে চেষ্টা করে বিফল হচ্ছি, সেখানে প্রেমটা ভেঙ্গে গেল কত সহজে।

 

আমার প্রেমিক প্রায়ই বলতো, খাদিজা! সামাজিক স্বীকৃতির নাম বিয়ে নয় মনের স্বীকৃতির নাম বিয়ে।
সামাজিক স্বীকৃতি হচ্ছে একটা লোকদেখানো ভণ্ডামি।
অথচ সামাজিক স্বীকৃতি আর দুটি মনের স্বীকৃতির মাঝে যে কতটুকু তফাৎ তা আজ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি!

আমি জানি, আমার মতো এই সমাজে অনেকেই আছেন, আসলে তারা আমার মতোই ভুলপথে আছেন।

প্রেমে কোনো দায়িত্ববোধ কর্তব্য কিছুই নেই, অথচ বিয়েতে সবই আছে!





 



একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।
           বাবা-মায়ের প্রতি আমাদের দায় কতটা?

=
বয়স হয়ে গেলে কেন বাবা মা আমাদের কাছে বোঝার মতো হয়ে যায় বিষয়টা আমাকে খুবই ভাবায়!
এইত আর কিছুদিন গেলেই সময়টা আমারও আসবে, আমিও আমার সন্তানদের কাছে বিরক্তের বোঝা হয়ে যাবো এটা ভাবতেই কেমন যেন আমার গা শিউড়ে ওঠে।

 

আমার মা'ও সবার কাছে কেমন বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে, অথচ এটা ভাবলেই আমার কষ্ট লাগে।
যেই মা বাবা আমাদের ছোটবেলায় এত আদরের থাকে, যেই বাবা মা'কে ছাড়া আমরা একটা মুহূর্ত ভাবতে পারিনি সেই মা কেন সবার কাছে বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে এটাই আমার ভাবনার বিষয়।

 

দু'দিন আগে মা বেড়াতে এসেছিলো, দুইটা দিন আমি মা'কে খুব করে খেয়াল করলাম কেন মায়ের প্রতি সবার এত অসন্তোষ।

 

মা বিকেলে এলো, রাতে খেয়েদেয়ে নামাজ কালাম পড়ে শুয়ে পড়ল, উঠলো রাত তিনটেয়। ওযু করে লাইট জ্বালিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ল, তারপর একা একা কথা বলতে শুরু করল।

 

আযানের আগে থেকেই নাতনী আর মেয়েজামাইকে ডাকতে শুরু করে দিলো। আমি ভয়ে ভয়ে আগেই উঠে গেলাম, কিন্তু ওরা উঠল না গো ধরে শুয়ে রইল। ওরা শুয়েছে রাত ১টায় আমি জানি ওরা এত সকালে উঠবে না, কিন্তু মায়ের কথা সে ডাকছে তা ওরা উঠবে না কেন! ওদের অনেক্ষণ বকাবকি করে কিছুক্ষণ কাঁদলো, তারপর আমাকে বকতে শুরু করে দিলো।

 

আমি কেন ওদের শাসন করি না! আমার জন্যেই ওরা এত বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে, পরকালে ওরা আমার বুকেই পারা দিয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি কিছুই বললাম না শুধু চুপচাপ শুনে গেলাম।

 

আসলে আমার অত কাউকে শাসন করতে ভালো লাগে না। আমরা ভাইবোনেরা অনেক শাসনের মধ্যে বেড়ে উঠেছি, কিন্তু কেউই পরিপুর্ণ মানুষ হতে পারিনি, সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে।

 

তাই আমার মনে হয় ছেলেমেয়ে যেভাবে বেড়ে উঠছে উঠুক, ওদেরও তো কিছুটা স্বাধীনতার প্রয়োজন রয়েছে, শুধু ভুল হলেই সেটা ধরিয়ে দেই, কিন্তু এটা আমার মা মানতে পারে না।

 

সারাদিন নাতনী আর মেয়েজামাইয়ের একশো একটা ভুল। আমি জানি ওরাও ওর নানুকে অপছন্দ করে, কিন্তু কেউ মুখে বলে না শুধু আচরণে প্রকাশ করে।

 

সারাদিন যতকিছু রান্না করলাম কোনোকিছুই তার পছন্দ হলো না, সব মুখে দিয়েই কেমন মুখ বিকৃত করে ফেলে, আমি চেষ্টা করি রান্না ভালো করতে কিন্তু কিছুতেই তার পছন্দমতো করতে পারিনা।

 

সন্ধ্যার পর এসে বলতেছে আজ আমি তোমার কাছে ঘুমাবো, ও ঘরের বিছানা শক্ত। আমি বললাম ঠিক আছে। সে আমার রুমে নামাজ ওযিফা কোরআন তেলাওয়াত করলো রাত দশটা পর্যন্ত, তারপর কিছু মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ল।

 

মা বেটি খাটের দুইপাশে দু'জন শুয়ে পড়লাম। শোওয়ার পর মা মোবাইলে ফুল সাউন্ড দিয়ে তার কানের কাছে রেখে দিলো। মোবাইলে একটার পর একটা ওয়াজ বেজে চলছে, আমি ঘুমাতে পারি না, বিরক্ত হয়ে আমার কান্না চলে আসছিলো। আমি দুইহাতে কানে আঙ্গুল চেপে শুয়ে থাকি!

 

আমি বুঝতে পারি কেন মায়ের প্রতি সবাই বিরক্ত হয়, মা যদি একটু বুঝত তাঁর এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণে তাঁর প্রতি সবাই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে, সব বাবা মা'য়েরাই যদি তাদের নিজেদের ভুলগুলোও খতিয়ে দেখত, তাহলে হয়ত ছেলে আর ছেলেবউদের গায়ে এতটা অপবাদ লাগত না!

সহজ সরল মানুষকে কে না পছন্দ করে!








একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।


          চারপাশের মানুষের চালচিত্র---- 

=
হাসপাতাল হয়ে ফিরেছি অনেকদিন, কিন্তু আগের মতো সুস্থ এখনও হতে পারিনি। আসলে এখন যতটা না অসুস্থ তারচে বেশি হারিয়েছি মনের জোর। কোনো কাজেই আর উৎসাহ পাই না, ভেঙ্গে গেছে মনোবল অনেকটা!
জানিনা উৎসাহ উদ্দীপনায় ফের আগের মতো হতে পারব কিনা!

 

নতুন বাসায় আসার পর বন্ধু হয়েছিলো অনেকই। বাসা থেকে নামতে উঠতে দেখা হতো অনেকের সাথে। সবাই জিজ্ঞেস করত কেমন আছি শরীরের অবস্থা কি!
অনেকেই হাত টেনে ধরে জিজ্ঞেস করত কেন অপারেশন করতে দেরি করাচ্ছি!

 

কেউ কেউ আমার চুপ থাকাতে ধরে নিতো হয়ত আমি টাকার অভাবে অপারেশন করাচ্ছি না। তারা তখন ভর্ৎসনা করে বলত, দেখেন! মানুষ অসুস্থ হলে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে হলেও চিকিৎসা করে, আর আপনি এভাবে অবহেলা করে নিজেকে শেষ করে ফেলছেন?

 

আপনি কি সংসার বাচ্চা এদের কথাও ভাবেন না!
আপনার টাকার সমস্যা হয় আমাদের কাছ থেকে ধার নিন, আপনি যখন পারেন আমাদের ফেরত দিয়ে দেবেন!

 

হাসপাতালে যাওয়ার আগে একজনের কাছ থেকে দু'হাজার টাকা ধার নিয়ে গিয়েছিলাম! ফিরে আসার পর থেকে কাজও ঠিকমত করতে পারছি না, তার টাকাটাও আর ফেরত দেয়া হয়নি!

 

কিন্তু হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে দেখি, সে আর আগের মতো আমার সাথে কথা বলে না!
একদিন লাজ লজ্জা ভেঙ্গে বলেই ফেললো, ভাই! টাকাটা কবে দিচ্ছেন?
আমার খুব সমস্যা! টাকাটা ছাড়া আমি চলতে পারতেছি না!
এরপর থেকে শুরু হয় সকাল বিকাল তাগাদা! যেখানেই যাই সেখানেই হাত পেতে বলে টাকাটা কখন দিচ্ছেন?

 

এরপর থেকে নিচে নামতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতেই আমার ভয় লাগে!
আমি পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করি!
দরজায় নক হলেই আমার বুকটা ধরাস করে ওঠে, মনে হয় এই বুঝি এলো সে!

 

গতকালকে টাকাটা হাতে পেয়ে সে অনেক খুশি ছিলো, যাবার আগে বলতেছে, আচ্ছা! কয়েকদিন ধরে আপনার মুখটা অমন মলিন দেখি কেন?
চোখমুখও লাল দেখি! আপনি কাঁদেন?

 

আমি হাসি হাসি মুখে বলি, নাহ আমি কাঁদব কেন?
সে বলে, আমি জানি আপনি অনেক কষ্টে আছেন!
আপনার জন্যে আমার অনেক মায়া হয়!
কিন্তু আপনি জানেন, আপনি এইযে এখন কষ্টটা করছেন, দেখবেন ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে একদিন আপনার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে!
আপনি আসলে অন্যরকম একজন মানুষ, আমার জামাইও সব সময় আপনার কথা বলে!

 

এমন করে আমাকে আরও একজন মানুষ কথায় কথায় বলত, খাদিজা! তুমি আসলে একজন অন্যরকম মানুষ! দেখো, একদিন তুমি অনেক বড় হবে!

 

এরা শুধু আমাকেই পরামর্শ দেয়, উদার হতে বলে, নিজেদেরকে বদলানোর চেষ্টা করে না কেন?
মহৎ কি কেবল একা আমাকেই হতে হবে?









একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।


          নারী কি আসলেই মায়ের জাত !? 

=
নারী মায়ের জাত, নারী মায়ার জাত, নারী অমুক তমুক পিশাচের জাত ভুত পেত্নী নারীকে সম্মান দিতে হবে!
আসলে এসব যারা বলে তারা এক নাম্বারের ধান্ধাবাজ!
নারী কোনকিছুরই জাত না, নারী শুধু মানুষের জাত!
ঠিক পুরুষের মতই, শুধু শরীরে আকার আর দু একটা অঙ্গের তফাৎ!

 

বলা হয়ে থাকে, নারী জন্মধাত্রী, তাকে সম্মান কর!
কিন্তু নারী! পনেরটা বিশটা বাচ্চার জন্ম দিয়েও আদতে কি তারা সম্মান পাচ্ছে?
সেইযে প্রথম বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য সে আঁতুর ঘরে ঢোকে, শেষ বয়সটা তাকে সে আঁতুর ঘরেই কাটাতে হয়!
বলা হয়ে থাকে নারীরা শারীরিক শক্তি বুদ্ধিমত্ত্বায় দুর্বল, তাই তাদের সবখানে সাহায্যের প্রয়োজন হয়!
আদতেই কি তাই!

 

নারী কি শারীরিক শক্তি বুদ্ধিমত্তায় আসলেই পিছিয়ে?
এটা সম্পুর্ণই ভুল! যদি নারী সত্যিই শারীরিক ভাবে দুর্বল হত ভীতু হত, তাহলে বাচ্চা দানকালে অর্ধেক নারী ভয়ে হার্টফেল করে মারা যেত!
একটা সংসার করতে বিপদে আপদে যত ধৈর্য্যর মোকাবেলা করতে হয়, নারী স্বাচ্ছ্যন্দে তা পাড় করে বরং পুরুষকে তারা উৎসাহ যোগায়!

 

অনেককে দেখি নারীর পিরিয়ড নিয়ে নানা রকম সিচুয়েসন তৈরী করে, আবার অনেক নারীকে দেখি তা থেকে সিমপ্যাথি আদায় করতে।
আসলে এটা খুব সামান্য নরমাল বিষয়, শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের মতই!
অনেকেই বাড়তি সুবিধা আদায়ের জন্যে বলে থাকেন, এই সময়টা নারী অনেক কষ্টে থাকেন তাদের পেটে ব্যথা থাকে, আরে ওসব সামান্য পেটব্যথা তো কোষ্টকাঠিন্য আর পাতলা পায়খানাতেও হয়!

 

নারী সন্তান জন্ম দেয়, এতে আলাদা ক্রেডিট নেয়ার কি আছে?
এটা তো এক সৃষ্টির নিয়ম!
পৃথিবীর সমস্ত কিছু তো এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে, পশু পাখি গাছ পালা নদী নালা কীট পতঙ্গ!
কই তারা তো কোন ক্রেডিট নিচ্ছে না?
তারা তো কোন সম্মান চাচ্ছে না?

 

একজন নারী যেভাবে মা হন ঠিক সেই ভাবেই ঠিক অতটুকুন কষ্ট করেই রাস্তার কুকুরিটাও মা হয়। শুধু মা হওয়ার জন্য সম্মান পেতে চাইলে কিংবা দিতে হলে তাহলে ওই কুকুরিটাকেও দিন!

 

তাই এসব সাধারণ বিষয় নিয়ে সিমপ্যাথি আদায়ের চেয়ে আসুন সত্যিকারের সম্মান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি।
মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি!
বৃথা সময় নষ্ট না করে সম্মান কোথায় আছে তা খুঁজে দেখি!







          এটা দেখার জন্যই বেচেছিলাম------- 



একজন প্রাক্তন প্রেমিকার আত্মজীবনী থেকে কয়েকটি রচনা।

=
শীতের সকালে উঠোনের এক কোণে বাবুকে নিয়ে রোদে বসে আছি। বাবুর বয়স তখন মাত্র ২২ দিন। বোনকে বলেছি ঘর থেকে সরিষার তেলের কাপ আর বাবুর গরম জামা নিয়ে আয় ওর গা মুছে সব বদলে দিতে হবে। ওদিকে পাঁচমিশালি শাকওয়ালা এসে বসে আছে অনেক্ষণ। মহিলা সপ্তাহে একদিন আসে। বেচাকেনা শেষে যে মরা ধরা শাকগুলো বেচে যায় সেগুলো আমাকে দিয়ে যায়। পাঁচমিশালি শাক আমার খুবই পছন্দ।

 

বোন এসেছে দু' সপ্তাহ ধরে, আমি সব কাজই করতে পারি, তখন শক্ত হয়েছি অনেকটা তবু মা জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রথম এক সপ্তাহ মা কাছে ছিলো।

 

বোন তেলের কাপ আর গরম জামার জন্যে ঘরে গেছে অনেক্ষণ, এদিকে শাকওয়ালা মহিলা টাকার জন্যে বসে আছে।
আমার মনের মধ্যে কেমন যেন করে, ইদানিং এতবেশি সন্দেহপরায়ন হয়ে উঠেছি যে, সবকিছুতে আমার সন্দেহ করা চাই!

 

এই যেমন রাতে খেতে বসেছি, হুট করে কারেন্ট চলে গেলো, আমার কোলে বাবু আমি উঠতেও পারিনা। বোনকে ডেকে বলি, ম্যাচ আর হেরিকেনটা দিয়ে যা তো!
আমার এটো হাত প্লেটে ভাত নিয়ে অন্ধকারে বসে থাকি, কিন্তু ও সহজে আসে না। কেমন যেন অন্ধকারের মাঝেও শব্দ হয়, মনে হচ্ছে ওকে কেউ জোর করে ধরে রেখেছে আর ও প্রাণপনে ছোটার চেষ্টা করছে।

 

ছোট্ট একটা ঘর, শ্বাশুড়ি আমি মিলে খেতে বসেছি, কিছু বলতেও পারি না।
এমন এমন আরও অনেক দেখি, মনকে বুঝাই আমি মনে হয় আজকাল বেশি সন্দেহ করছি মানুষকে।

 

তেল নিয়ে আসে না দেখে আমি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাই ঘরের দিকে, ঘরের দরজার একপাল্লা খোলাই ছিলো। নিঃশব্দে ঢুকে দেখি ওকে বুকের ওপর নিয়ে শুয়ে আছে ওর বোন জামাই, আমায় দেখে তড়িঘড়ি করে নামিয়ে দিলো।
আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার মুখে কিছুই আসছিলো না। এই আমাদের ভালোবাসা!

 

আমি চুপচাপ বসে পড়লাম খাটের এক কোণায়। আমি যদি চিৎকার চেচামেচি করি তাহলে বাড়ির সবাই জেনে যাবে। আবার যদি মা'কে বলে দেই তাহলে ওর চিরজীবনের জন্যে এবাড়ি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিংবা কেউ কেউ যদি বলে এক বোনের সাথে সম্পর্ক হলে আরেক বোন তালাক হয়ে যায় তাহলে এই দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি কোথায় যাবো!

 

আমি এই অল্প বয়সেও অনেককিছু ভাবতে শিখেছিলাম, আমি কাউকে কিছু বলিনি।
দাঁতে দাঁত চেপে সয়েছি।

 

তবে চারদিন দরজা এঁটে দিয়ে শুধু কেঁদেছিলাম। তারপর বহু কষ্টে খানিক কীটনাশক যোগার করেছিলাম। ঢেলেও দিয়েছিলাম গলাতে। চারদিনের না খাওয়া পেটে সেই বিষ জ্বলতে জ্বলতে নেমে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি মরতে পারিনি!

 

বিধাতা আমাকে আরও অনেককিছু দেখার জন্যে বাঁচিয়ে রেখেছেন!।





 

Post a Comment

1 Comments